মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইল পাড়া গ্রামে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই থেকে জনৈক যুবক এসেছেন বিয়ে করতে। দুবাইতে কামানো গরম পয়সা। টগবগে স্মার্ট যুবক। একই উপজেলার জালিয়া পালং এলাকার কণে ঠিক করা আছে আগে থেকেই। বিদেশ থেকে আসার ৫ দিন পর গত ১৯ মার্চ বিয়ের সানাই বাজানো হলো। কারণ স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐ প্রবাসী যুবক আবারো দুবাই চলে যাবেন।
ধুমধাম করে বিয়ে আয়োজন প্রায় শেষ। বরযাত্রী সহ উভয় পক্ষের শ’পাঁচেক লোক খাওয়া দাওয়া করেছে। বড় এমাউন্টের মোহরানা ধার্য করে কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন। কণের জালিয়া পালং এলাকার বাড়ি থেকে কণেকে নিয়ে যাওয়া হলো বরের রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইল পাড়া গ্রামের বাড়িতে।
এবার বর কণের জন্য মনোরমভাবে সাজানো বাসর ঘরে যাওয়ার পালা। এমন সময় খবর পেয়ে উখিয়ার ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান হাজির বরের বাড়িতে। তাও আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পুলিশসহ দলবল নিয়ে। বিয়ে বাড়ির লোকজন হঠাৎ পুলিশ, ইউএনও সহ অন্যান্যদের দেখে চরম আতংকিত হয়ে দ্বিকবিদিক পালাতে শুরু করলো। তখন ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান ঐ এলাকার সমাজের সর্দারকে ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করেন। বর কণের পিতাদ্বয়কে ডেকে এনে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে মুছলেকা নেন। মুছলেকায় লেখা হলো বিদেশ ফেরত বর দেশে আসার ১৪ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত কণের পিতা তার মেয়েকে বরের বাড়িতে কোন অবস্থাতেই যেতে দেবেন না। একইভাবে বরও ১৪ দিন পার না হওয়ার আগে শ্বশুর বাড়িতে যাবেননা। তাকে, কমপক্ষে ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। এ মুছলেকা দিয়ে কণের পিতা তার মেয়েকে বরের রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইল পাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে তার মেয়েকে জালিয়া পালং এলাকার বাড়িতে নিয়ে এসে কোন রকমে রক্ষা পায়। পঁচে যায় বাসরঘরে সাজানো সব ফুল। এসময় ইউএনও’র কঠিন সিদ্ধান্ত দেখে বর-কণে উভয়ে মানসিকভাবে ভেংগে পড়ে এবং তাদের চোখ অশ্রুতে ভরে যায়।
এ বিষয়ে উখিয়ার ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান সিবিএন-কে বলেন, “ঘটনাটি একজন মানুষ হিসাবে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। কিন্তু হাজার জনকে বাঁচানোর জন্য ২ জনের একটু মানসিক ক্ষতি হলেও জনস্বার্থে তখন আর করার কিছুই ছিলোনা। যে কারণে নব বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর বাসররাত কাটানোর সেই স্বপ্ন আমাকে অত্যন্ত নির্মমতার সঙ্গে চুরমার করে দিতে হয়েছে”।
এভাবে ভয়ংকর করোনা ভাইরাস স্বামী-স্ত্রীর বাসররাতে পর্যন্তও হানা দিচ্ছে দেখে এলাকার মানুষও হতভম্ব হয়ে যায়। সবাই বলছিলো, “হায়রে করোনা ভাইরাস, তুই এত নিষ্ঠুর!”
এদিকে, উখিয়া উপজেলায় ২৯ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান সিবিএন-কে জানিয়েছেন। এছাড়া গত ১৭ মার্চ অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা একজন রোহিঙ্গা ১২ নাম্বার রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জের অধীনে সেখানকার হাসপাতালে কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। তিনি নিজে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং তার স্বজনদের দেখতে অস্ট্রেলিয়া থেকে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে এসেছেন বলে সিবিএন-কে ইউএনও মোঃ নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।